মো. শহিদুজ্জামান রনি: কুমিল্লা মেঘনা উপজেলায় ১১টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে এরমধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়নের পাঁচটিই ঝুঁকিপূর্ণ এবং এই অবস্থাতেই চলছে স্বাস্থ্যসেবা। এই পাঁচটির মধ্যে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ও বেহাল দশা চালিভাঙ্গা ইউনিয়নে নদীর তীরে অবস্থিত ‘বাগ বাজার কমিউনিটি ক্লিনিক। দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে স্বাস্থ্যসেবার কার্যক্রম। ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখা গেলেও স্বাস্থ্যসেবার কার্যক্রম চলমান। যে কোনো সময় ভবনটি ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যার ফলে এলাকাবাসী ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনে স্বাস্থ্যসেবা নিতে রীতিমতো ভয় পাচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ২০০০ সালে এ ভবনটি নির্মিত হলে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে কয়েক বছর যেতে না যেতেই পলেস্তারা খসে পড়ে বেড়িয়ে এসেছে ইট, দেখা দিয়েছে মূল ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল। সামান্য বৃষ্টি হলেই টিপ-টিপ করে পানি পড়ে তলিয়ে যায় ক্লিনিকের কক্ষ। ভবনটিতে নেই কোনো ভালো দরজা-জানালা, নেই কোনো ফার্নিচার ও অন্যন্য আসবাবপত্র। ফার্নিচার না থাকায় ঔষধের কাঠনেই রাখা হয় প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র। প্রায় একযুগ ধরে এ জরাজীর্ণ ভবনে চলছে স্বাস্থ্যসেবা। এই কমিউনিটি ক্লিনিকে নেই কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ, নেই কোনো সড়ক সংযোগ। সংযোগ সড়ক না থাকায় বর্ষাকালে এই ক্লিনিকের চতুর্পাশে পানি এলে রোগী ও স্বজনদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে হয় এমনটা জানিয়েছে এলাকাবাসী। কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) মো. জামান মিয়া জানান, এই ক্লিনিকের অবস্থা খুবই নাজুক। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হয়। ভবনের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে বড় ধরনের ফাটল ধরেছে। যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে এই ভবন। একদিকে ভবন নিয়ে সমস্যা অন্যদিকে বসার মতো নেই কোনো ফার্নিচার। অপরদিকে নেই সংযোগ সড়ক ও বিদ্যুৎ সংযোগ। এই সংযোগ সড়কের বিষয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবিরসহ তার পূর্বের চেয়ারম্যানকে প্রায় একযুগ ধরে লিখিতভাবে জানিয়ে যাচ্ছি কিন্তু এর কোনো প্রতিক্রিয়া পায়নি। তবে ফার্নিচারের বিষয়ে বর্তমান চেয়ারম্যানকে তিনমাস পূর্বে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে আমি লিখিতভাবে অবহিত করেছি। তিনি আরও জানান- এই ক্লিনিকে প্রায় পাঁচ বছর যাবৎ ‘এফডাব্লিও’ পদটি শূন্য হয়ে আছে। বর্তমানে আমি ও স্বাস্থ্য সহকারী আবু বক্কর সিদ্দিকসহ এই দু’জনে নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা এবং মাতৃস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবাসহ প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি।
চালিভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ইউনিয়নের ২টি ক্লিনিকের মধ্যে বাগ বাজারের কমিউনিটি ক্লিনিক ভবনটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। সংযোগ সড়ক না থাকায় আমি বর্ষাকালে পানি উঠলে বাঁশের সাঁকো করে দেই, যেন রোগিদের স্বাস্থ্যসেবা নিতে অসুবিধা না হয়। তবে সংযোগ সড়ক ও বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষদের জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়মা রহমান মানবজমিনকে বলেন, এ উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনগুলো নতুন করে পুনর্নির্মাণের জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে তালিকা করে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ আসলে বাগ বাজারসহ অন্যন্য ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো নতুন করে নির্মাণ করে দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন- সংযোগ সড়ক ও বিদ্যুৎ সংযোগ এর বিষয়ে নতুন ভবন করার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।