সেনা অভিযানে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৭ দালাল আটক;

মোঃ আল আমিন বিশেষ প্রতিনিধি দেবীদ্বার (কুমিল্লা) দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দালাল চক্রের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার (২১ অক্টোবর) একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনা বাহিনীর অভিযান পরিচালনা করা হয়। ওই অভিযানে ৩ নারী ও ৪ পুরুষ দালালসহ ৭ দালাল সদস্যকে আটক করা হয়। সোমবার দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) মো. রায়হানুল ইসলামের উপস্থিতিতে উক্ত অভিযানে অংশনেন সেনা কর্মকর্তা মেজর ইসকান্দার মির্জা, সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার এনামুল হক এর নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি দল। আটককৃত ৭ দালালকে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) রায়হানুল ইসলাম (দন্ডবিধি ১৮৬ ধারায়) তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করে থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করেন। আটককৃতরা হলেন, দেবীদ্বার পৌরসভার বারেরা গ্রামের এরশাদ মিয়ার পুত্র বিল্লাল হোসেন(৩৫) ও সুলতান আলীর পুত্র মোঃ জাকির হোসেন(৪০), উপজেলার ওয়াহেদপুর গ্রামের মৃত: হাবিবুর রহমানের পুত্র মোঃ বুলবুল হোসেন (৪২) ও বাচ্চু মিয়ার স্ত্রী সাহিনা আক্তার(৪০), বারুর গ্রামের মৃত: ইসমাইল হোসেনের পুত্র আব্দুল জলিল(৩৭), ছোটআলমপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেন এর স্ত্রী নাছিমা বেগম(৫৫), রসুলপুর গ্রামের মোঃ জিয়া খানের স্ত্রী ফাতেমা(৩০)। রোগি ও ভোক্তভ‚গীরা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা রোগি ও তাদের স্বজনরা উপজেলা সদরের ২৩টি প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়োগনেষ্টিক সেন্টারের প্রায় অর্ধশতাধিক দালারের উৎপাতে অতিষ্ঠ দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগি, অভিভাবক ও চিকিৎসক কর্মচারীরা। দালাল চক্র নানা কৌশলে দরিদ্র ও সহজ সরল রোগীদের সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে অনুৎসাহীত করে প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনেষ্টিক হাসপাতালে নিয়ে যায়। এবং প্রাইভেট চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও নি¤œমানের ভিটামিন ঔষধ দিয়ে টাকা হাতিয়ে সর্বশান্ত করে দেয়। এ ছাড়াও কিছু দালাল সরকারী হাসপাতালের ৫ টাকার টিকেটের মাধ্যমে বিনামূল্যের ঔষধগুলো চিকিৎসকদের কাছ থেকে লিখে নিয়ে রোগিদের মাঝে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করেন। রোগি বা তাদের স্বজনরা ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করলে মারধর ও লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। এমনকি চিকিৎসকরাও নানা ভাবে লাঞ্ছিত এবং মারধরের শিকার হচ্ছেন। প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্স চালকদের হুমকীর মুখে সরকারী হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করতে পারেনা। সরকারী এ্যাম্বুলেন্স থেকে রোগি নামিয়ে জোরপূর্বক নিয়ে যায়। রাত দিন ২৪ ঘন্টা সরকারী হাসপাতালের জরুরী বিভাগে একদল দালাল জরুরী যে কোন রোগি আসলেই রোগি দখলে নিতে দালালে দালালে টানা হেচরা এবং মারামারি শুরু করে দেন। ভোক্তভোগীরা আরো জানান, দালাল চক্র তিনটি ভাগে বিভক্ত এক ভাগ বাস ষ্ট্যান্ড-এ যানবাহন থেকে নেমে আসা রোগিদের অতি আপনজন হয়ে রোগের খোঁজ-খবর নেন, তার পর বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনেষ্টিক সেন্টারে পাঠন, আরেক শ্রেণীর দালাল টিকেট কাউন্টার থেকে রোগি বাগিয়ে নেন, আরেক শ্রেণীর দালাল জরুরী বিভাগ থেকে রোগি বাগিয়ে নেন। নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক চিকিৎসক জানান, দালাল এবং বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা রোগির ব্যবস্থা পত্র লিখার সময় ঘারের দাড়িয়ে দাড়িয়ে রোগির ব্যবস্থা পত্রে কি লিখছি তা পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। তারাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং কোন কোম্পানীর ঔষধ লিখতে হবে তারও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কথার অবাধ্য হলে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। তিনি আরো জানান বড় প্রভাবশালী দালালরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাহিরে আছে।

Share, Follow & Subscribe

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *