নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী জেলার মোহনপুর থানার কেশরহাট পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড গরুর হাটের পশ্চিমে নিকাহ রেজিস্ট্রার মোঃ হাবিবুর রহমানের নিকাহ্ রেজিস্টার কার্যালয়ে তার পিতা সাবেক নিকাহ্ রেজিস্টার মোঃ ফজলুর রহমান বাল্যবিবাহের সহযোগিতা করে। বুধবার ২৭ নভেম্বর দুপুরে কেশরহাট পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড গরুর হাটের পশ্চিমে নিকাহ্ রেজিস্টার হাবিবুর রহমানের কার্যালয়ে বাল্যবিবাহের কার্যক্রম চলে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (ভ্রাম্যমান আদালত) নারী শিশু নির্যাতন ২০১৭ এর ৮ ধারায় ফজলুর রহমানকে ৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার) টাকা জরিমানা করেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত ভিকটিমদেরকে তাদের অবিভাবকদের নিকট তুলে দেয়। এবং উভয়ের উপযুক্ত বয়স না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে না দেওয়ার জন্য অভিভাবকদেরকে অনুরোধ জানান। এবং অল্প বয়সে বিয়ে দিলে কি কি সমস্যা হতে পারে তা তুলে ধরেন। ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, কাজী ফজলুর রহমানের সহযোগিতায় অভিভাবক ছাড়া ছেলে মোঃ রানা হোসেন (২০) পিতা- মোঃ মকছেদ হোসেন, মাতা- মোসা: বেদানা বেগম, গ্রাম-গোপইল, থানা- মোহনপুর, জেলা- রাজশাহী। কন্যা - মোসা: মারিয়াম আক্তার (১৬) পিতা- নূর মোহাম্মদ মাতা- বিলকিস আক্তার, গ্রাম- পূর্ব মাইঝ পাড়া, থানা- করিমগঞ্জ, জেলা - কিশোরগঞ্জকে বাল্যবিবাহের সহযোগিতা করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপস্থিত ব্যক্তিরা বলেন যে, ফজলু কাজীর ছোট ছেলে মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান নিকাহ রেজিস্টার ৩নং রাইঘাটি ইউনিয়নের বিবাহ রেজিস্ট্রারী খাতায় বাল্যবিবাহ রেজিস্ট্রি করে। অধীক্ষেত্রের বাইরে মোহনপুর থানার যেকোনো এলাকায় বাল্যবিবাহ বা যেকোনো বিবাহ রেজিস্ট্রি করে থাকেন। ইতি পূর্বে টাকার বিনিময়ে অনেক বাল্যবিবাহ করিয়েছেন। ২নং ঘাষীগ্রাম ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্টার মোঃ মনির উদ্দিন শাহ বলেন যে, আমার ইউনিয়নের এলাকায় বাল্যবিবাহ বা যেকোনো বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রি করে। তিনি আরো বলেন গত ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ইং তারিখে সাদিয়া আক্তার রাফিয়া, পিতা- জামিনুল মন্ডল, গ্রাম- আতা নারায়ণপুর, মোহনপুর, রাজশাহীর বিবাহ রেজিস্ট্রি করেছেন। ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে রাজশাহী জেলা রেজিস্টার বরাবর অভিযোগ দেওয়ার পরেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তিনি প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বিগত আওয়ামী লীগের আমলে সাবেক সংসদ সদস্য (রাজশাহী -৩) মোঃ আয়েন উদ্দিন অবৈধ ভাবে মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান রায়ঘাটি ইউনিয়নের বাসিন্দা না হওয়া সত্ত্বেও তাকে ৩নং রাইঘাটি ইউনিয়নের নিকাহ্ রেজিস্টার পদে নিয়োগ করিয়ে দেন। মোস্তাফিজুর রহমান কেশরহাট পৌরসভার স্থায়ী বাসিন্দা। কেশরহাট পৌরসভার নিকাহ্ রেজিস্টার আব্দুল হাই আল হাদি বলেন যে, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় হইতে সমগ্র কেশর হাট পৌরসভার নিকাহ্ রেজিস্টার পদে ২০০৪ সালে নিয়োগ লাভ করি। কিন্তু ২০২০ সালে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সাব রেজিস্ট্রার মোহনপুরকে কেশরহাট পৌরসভার ১,২,ও ৩ নং ওয়ার্ড শূন্য থাকলে নিকাহ্ রেজিস্টার নিয়োগের প্যানেল করিয়া পাঠানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু সাব রেজিস্ট্রার মোহনপুর সাবেক নিকাহ্ রেজিস্টার মোঃ ফজলুর রহমানের নিকট প্রভাবিত হইয়া কেশরহাট পৌরসভার ১,২, ও ৩ নং ওয়ার্ড শূন্য না থাকা সত্ত্বেও নিকাহ রেজিস্টার নিয়োগের প্যানেল করিয়া মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। অবৈধ ভাবে সাবেক সংসদ সদস্য মোঃ আয়েন উদ্দিন (রাজশাহী -৩) কেশরহাট পৌরসভার ১,২,ও ৩ নং ওয়ার্ডের নিকাহ্ রেজিস্টার হিসাবে নিয়োগ লাভ করিয়ে দেন মোঃ হাবিবুর রহমানকে। তিনি আরো বলেন যে মোঃ ফজলুর রহমান সমগ্র কেশরহাট পৌরসভায় বাল্যবিবাহ বা যেকোনো বিবাহ ও তালাকের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিগত আওয়ামী লীগের আমলে মোঃ হাবিবুর রহমান ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং তার বিরুদ্ধে মোহনপুর থানায় একাধিক নাশকতার মামলা আছে। রাজশাহী জেলা মুসলিম নিকাহ্ রেজিস্টার সমিতির সভাপতি কাজী মোঃ নুরুল আলম বলেন যে, ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে কয়েকবার জেলা রেজিস্টার অফিসে তার অধিক্ষেত্রের বাইরে বিবাহ রেজিস্ট্রি করার অভিযোগে ২নং ঘাষিগ্রাম ইউনিয়নের নিকাহ্ রেজিস্টার মোঃ মনির উদ্দিন শাহ এবং কেশরহাট পৌরসভার নিকাহ্ রেজিস্টার আব্দুল হাই আল হাদি এর সাথে মীমাংসা করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি অবসার প্রাপ্ত নিকাহ্ রেজিস্টার হওয়া সত্ত্বেও অবৈধভাবে বিবাহ ও তালাক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অবৈধ কার্যক্রমের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এদের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন।