স্টাফ রিপোর্টার: বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি বড় প্রকল্পের পরিচালক করা হয়েছে কনিষ্ঠ এক কর্মকর্তাকে। এ নিয়ে বিএমডিএর সিনিয়র কর্মকর্তাদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তাকে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের বাধ্যবাধকতা থাকলেও মো. নাজমুল হুদা নামের যে কর্মকর্তাকে ৫২০ কোটি টাকার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) করা হয়েছে, তিনি বাস্তবে ষষ্ঠ গ্রেডের একজন প্রকৌশল কর্মকর্তা। তিনি সহকারী প্রকৌশলী হলেও বিএমডিএর প্রধান কার্যালয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্বে আছেন। বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলীদের মধ্যে নাজমুল হুদার অবস্থান ২০তম এবং বিএমডিএর প্রকৌশল কর্মকর্তাদের মধ্যে তার অবস্থান ৪৭তম। যোগ্য না হলেও বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারণে ওই কনিষ্ঠ কর্মকর্তাকে প্রকল্প পরিচালক করেছে। এর পেছনে চেয়ারম্যান আখতার জাহান ও তার ব্যক্তিগত সহকারী বণির সহযোগিতা আছে বলে বরেন্দ্রতে আলোচনা আছে। জানা যায়, ডাবল লিফটিং পদ্ধতিতে পদ্মা নদীর পানি বরেন্দ্র এলাকায় সরবরাহ ও সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নাজমুল হুদাকে নিয়োগ দিয়ে ৩ মার্চ কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রকল্পের মোট অর্থমূল্য ৫২০ কোটি টাকা। এর আগে বিএমডিএ’র পক্ষ থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রধান প্রকৌশলী আবুল কাশেম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল লতিফ ও চলতি দায়িত্বের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজমুল হুদার নাম প্রকল্প পরিচালক হিসাবে সুপারিশ দিয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তবে বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদের পছন্দের জুনিয়র কর্মকর্তা নাজমুল হুদাকেই প্রকল্প পরিচালক করে প্রজ্ঞাপন জারি করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব তাসলিমা আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনটি রাজশাহীতে বিএমডিএ-তে জানাজানি হলে সিনিয়র তত্ত্বাবধায়ক ও নির্বাহী প্রকৌশলীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও নির্বাহী পরিচালকের কাছে মৌখিকভাবে এর প্রতিবাদ জানান। তবে চাকরি বিধি শৃঙ্খলার কারণে প্রতিবাদকারী বঞ্চিত এসব কর্মকর্তা প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের অভিযোগ মতে, বিএমডিএতে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের জন্য একটি নীতিমালা আছে। নীতিমালার ৪ (৪) অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, জাতীয় বেতন স্কেলের পঞ্চম গ্রেডের নিচে নয় এমন কর্মকর্তাকে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করতে হবে। সেক্ষেত্রে মো. নাজমুল হুদা একজন ষষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে কোনোভাবেই প্রকল্প পরিচালক হিসাবে নিয়োগ পেতে পারেন না। নীতিমালার ৩ এর ২(খ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো কর্মকর্তাকে প্রকল্প পরিচালক করতে হলে মানদণ্ড হিসেবে শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মঅভিজ্ঞতা, প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা, প্রকিউরমেন্ট-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বিবেচনায় নিতে হবে। জানা যায়, নাজমুল হুদার প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত অতীত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। অন্যদিকে নীতিমালার ৪(৪) অনুচ্ছেদে আরও বলা হয়েছে, ক্রয় সংক্রান্ত বিধানাবলী, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, বাস্তবায়ন কাজে অভিজ্ঞ এবং পঞ্চম গ্রেডের নিচে নয় এমন অভিজ্ঞ কর্মকর্তাকে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এক্ষেত্রে পিডি হতে আগ্রহী প্রধান প্রকৌশলী আবুল কাশেম ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল লতিফ, নাজমুল হুদার চেয়ে অনেক সিনিয়র ও অভিজ্ঞ। তবে তাদের নতুন এই প্রকল্পের পিডি নিয়োগ না দিয়ে জুনিয়র কর্মকর্তা নাজমুল হুদাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, ডাবল লিফটিং পদ্ধতিতে বরেন্দ অঞ্চলে পদ্মার পানি সরবরাহ ও সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও উচ্চ কারিগরিভাবে জটিল। এ ধরনের একটি ঝুঁকিপূর্ণ ও জটিল প্রকল্পের পরিচালক করা হয়েছে কনিষ্ঠ একজন কর্মকর্তাকে, যার প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত কোনো অতীত অভিজ্ঞতা নেই। সেক্ষেত্রে এমন একটি বড় প্রকল্প কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে বিএমডিএর কর্মকর্তাদের মাঝে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে প্রকৌশলী নাজমুল হুদার নাম মন্ত্রণালয়ে সুপারিশের ক্ষেত্রে জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিএমডিএর কর্মকর্তাদের তালিকায় দেখা গেছে, প্রকৌশলী নাজমুল হুদা ষষ্ঠ গ্রেডের একজন কর্মকর্তা। কিন্তু ১১ জানুয়ারি বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদ কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তাবনা ও সুপারিশে নাজমুল হুদাকে পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদ বলেন, ‘প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের বিষয়। আমরা শুধুমাত্র নাম প্রস্তাব করি। মন্ত্রণালয় যাকে যোগ্য মনে করেছে তাকে নিয়োগ দিয়েছে।’ নাজমুল হুদাকে পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে উল্লেখ করার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। প্রকল্প পরিচালক হয়েই ৮ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করেছেন প্রকল্প পরিচালক নাজমুল হুদা। ওই প্রকল্পে ৮ কোটি টাকার ৪০টি কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে এখন ভাগ-বাটোয়ারার আয়োজন চলছে। সবগুলো কাজই রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায়। চেয়ারম্যান, ইডি, পরিচালনা বোর্ডের সদস্য, রাজনৈতিক নেতাদের পছন্দের ঠিকাদার, প্রকল্প পরিচালকের ঘনিষ্টরা এই ৪০টি কাজ পাচ্ছেন। রবিবার তাদের কার্যাদেশ দেয়া হবে। এব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক নাজমুল হুদা বলেন, আমি এ বিষয়ে ফোনে কথা বলবো না। আপনি অফিসে এসে বক্তব্য নিবেন বলেই ফোন কেটে দেন।