মো. শহিদুজ্জামান রনি: কুমিল্লা মেঘনা উপজেলার পাড়ারবন্দ, কাঠালিয়া, শেখেরগাঁও, রামপ্রসাদেরচর ও চালিভাঙ্গাসহ আরও কয়েকটি এলাকায় নৌপথে প্রায় দেড়যুগেরও বেশি সময় অবৈধভাবে একটি মহল চাঁদাবাজি করে আসছে। এতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসন। এদের নাকের ডগায় চাঁদাবাজরা তাদের রামরাজত্ব কায়েম করে আসছে বলে স্থানীয়রা জানায়। এই উপজেলার নদীপথ দিয়ে চলাচলরত বাল্কহেড, মালবাহী ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও জেলেদের হতে ১ হাজার থেকে ৩,৮০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করার এই বিষয়টি একটি চলমান রীতিতে পরিণত হয়েছে। এ নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদাবাজরা চাঁদা আদায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে দুর্দান্ত দাপটে। প্রাণনাশের ভয়ে তাদের নাম প্রকাশ করছেনা ভুক্তভোগীরা। সম্প্রতি রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টার ট্রলারে ইমরান ভূইয়া নামে এক নৌপথের পথযাত্রী উপজেলার তুলাতুলী বাজারের ঘাট থেকে বৈদ্যেরবাজার ঘাট হয়ে ঢাকা যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে দু'টি জায়গায় চাঁদা আদায় করতে দেখতে পান তিনি। ইমরান ভূইয়া আমাদের এই প্রতিনিধিকে মুঠোফোনে বলেন, রামপ্রসাদেরচর এলাকায় স্পিডবোট দিয়ে বাল্কহেড থেকে চাঁদা আদায় করতে আমি দেখতে পেয়েছি এবং একইভাবে নলচর এলাকা থেকেও স্টিলের ছোট ইঞ্জিন চালিত নৌকা দিয়ে মালবাহী বাল্কহেড থেকে চাঁদা আদায় করতে দেখতে পাই। এটা নিজের চোখে দেখতে পেয়ে মেঘনার প্রশাসনের প্রতি তার ঘৃণা জন্মিয়েছে বলে জানান তিনি।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইঞ্জিনচালিত ছোট ছোট নৌকা বা স্পিডবোট দিয়ে নদীতে চলমান এসব নৌযান থেকে চাঁদা আদায় করছে চাঁদাবাজদের নিয়োজিত লোকজন। এসব চাঁদা আদায়কারীরা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নৌপথে চাঁদা আদায় কার্যক্রম চালিয়ে আসছে রিতীমত। তাদের দাবিকৃত চাঁদা না দেয়া হলে নৌযান শ্রমিকদের মারপিটসহ মালামাল লুট করে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। যে কারণে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে নৌযান শ্রমিকরা নিয়মিত চাঁদা দিয়ে নৌপথে মালামাল পরিবহন করে আসছে। এছাড়া জাতীয় পত্রিকাসহ টেলিভিশনে একাধিকবার মেঘনার নৌপথে বেপরোয়া চাঁদাবাজির কথা ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই নৌপথের চাঁদাবাজদের রুখে দেয়াসহ এদের চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে এলাকার স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, আগে আওয়ামিলীগ নেতারা চাঁদা আদায় করতো, আর এখন অন্যরা করছে, চাঁদাবাজি বন্ধ নাই চাঁদাবাজি চলমান রয়েছে। কিন্তু তাদের আমরা কাউকে চিনি না। এ বিষয়ে চালিভাঙ্গা নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আজামগীর হোসাইন বলেন, আমি এই এলাকায় চলতি মাসের ২৩ তারিখে এ ফাঁড়িতে যোগদান করেছি। অনেক এলাকা আমার চেনা-জানা নেই। তারপরও ইতিমধ্যে আমি নদীপথে আমার ফোর্স নিয়ে নৌ টহল জোরদার করেছি। নৌপথে কোন ধরনের চাঁদাবাজি বা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে না। তবে কোথাও কোন চাঁদাবাজির সংবাদ পেলে আমরা অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তারপূর্বক সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। অতএব চলমান চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হলে স্থানীয় এলাকাবাসীসহ সাংবাদিক ভাইদের সঠিক তথ্য দেয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেনু দাস বলেন, উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় মেঘনার নৌপথের চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন অনিয়ম বন্ধের বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়েছে। খুব শিগগিরই আমরা চলমান চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন অনিয়ম বন্ধ করতে কঠোরভাবে আইনি পদক্ষেপ নিবো। তবে আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা আমাদেরকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে আশাকরি আমরা অতি দ্রুতই এর সমাধান দিতে পারবো।